কোর্ট ম্যারেজ বাংলাদেশ

কোর্ট ম্যারেজ করতে কি লাগে, বয়স, খরচ, কি ভাবে, কোথায় করবেন?

এই লেখাটার মাধ্যমে কোর্ট ম্যারেজ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। এই লেখাটা পড়লে আপনার মনের সকল প্রশ্ন কি ভাবে? কথায়? বয়স? খরচ?  ইত্যাদি সমাধান পেয়ে যাবেন। 

কোর্ট ম্যারেজ হল হলফনামা বা অঙ্গীকারপত্র/চুক্তিপত্র , যার মাধ্যমে ছেলে মেয়ে স্বামী-স্ত্রী হিসাবে চুক্তিবদ্ধ হন । মুসলিম আইনে  বিবাহ একটি ধর্মিয় অনুষ্ঠান এবং দেওয়ানি চুক্তি। 

হলফনামা

হলফনামার মাধ্যমে একজন হলফকারী অন্য একজন হলফকারির সাথে নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে চুক্তি বদ্ধ হন। তেমনি কোর্ট ম্যারেজের হলফনামার মাধ্যমে ছেলে-মেয়ে একে অপরের সাথে স্বামি-স্ত্রী  হিসাবে চুক্তি বদ্ধ হয়।

মূল আলোচনা শুরুতে বলে নেই আমরা পালিয়ে বিবাহকে উৎসাহিত করছি না, অনেক সময় ফ্যামেলি গত ভাবে বিবাহ করতেও হলোফনামা করা হয়। 

কোর্ট ম্যারেজ নমুনা কপি প্রথম পেজ
কোর্ট ম্যারেজ নমুনা কপি প্রথম পেজ

কোর্ট ম্যারেজ কি?

আমরা কোর্ট ম্যারেজ বলতে মনে করি কোর্টে দাঁড়িয়ে ছেলে-মেয়ে বিবাহ করবে, কিন্তু বিষয়টা এমন না।  আমরা যেটাকে কোর্ট ম্যারেজ বলে জানি সেটা হল, তিন শত টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে হলফ পূর্বক ছেলে-মেয়ে স্বামী.-স্ত্রী হিসাবে ঘোষনা করা। 

আইনের দৃষ্টিতে কোর্ট ম্যারেজের ভ্যালু খুব কম। কোর্ট ম্যারেজ বিবাহের চুক্তি মাত্র কিন্তু কেউ যদি পাশাপাশি বিবাহ  রেজিস্ট্রি করে নেয়, তাহলে কোর্ট ম্যারেজ অতিরিক্ত সাপোর্ট হিসাবে কাজ করে। আইনের দৃষ্টিতে এই বিবাহ খুব শক্তিশালী হয়। 

কোর্ট ম্যারেজ কি ভাবে করতে হয়?

তিনশত টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে কিংবা প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেটের কার্যালয়ে (কোর্ট-এ)  গিয়ে করতে হয়। 

কোর্ট ম্যারেজ নমুনা কপি ২ নং পেজ

কোথায় গিয়ে করবেন?

অনেকে এ বিষয়ে না জানায় বুঝেই উঠতে পারেন না, কোথায় গিয়ে কোর্ট ম্যারেজ করবেন।  যেহেতু একজন আইনজীবী, নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে, প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেটের কার্যালয় এর ব্যাপার আছে সুতারাং আপনি কোর্টে গেলে সব একই জাগায় পেয়ে যাবেন। 

অনেকে বলে থাকেন এর কোন আইনগত ভিত্তি নেই!! আমি এই প্রশ্নের উত্তর আপনাদের উপর ছেড়ে দিলাম।

যেখানে একজন এডভোকেট, প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট বা নোটারি পাবলিকের স্বাক্ষর থাকবে। সরকার কর্তৃক অনুমোদিত নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প সিলসহ একটা প্রমানপত্র আপনার কাছে থাকবে। তার আইনগত ভিত্তি থাকবে না কেন? (মনে রাখবেন বিবাহ রেজিস্ট্রি করা বাদ্ধ্যতামুলক, অন্যথায় কোর্ট ম্যারেজের আইনগত ভিত্তি থাকবে না এটাই সত্য)। 

এছাড়া আমাদের সমাজে court marriage বললেই এর উপর আর কেউ ঝামেলা করে না।  সুতারাং এই হলফ নামাই বিয়ের পর যে কোন আইনি ঝামেলাইয় রক্ষা কবজ হিসাবে কাজ করে, (ছেলে বা মেয়ে  পক্ষের মিথ্যা মামলা থেকে রক্ষা, সম্পর্ক টিকায় রাখা ইত্যাদি) তবে মনে রাখতে হবে বিবাহ রেজিষ্ট্রী করা বাদ্ধ্যতামুলক।

ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন খরচ

বিয়ের রেজিস্ট্রেশন ফি একুশ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ থেকে বাড়ানো হয়েছে। বিধিমালা ২০০৯ (সংশোধন ২০২২)-এর ২১ বিধি অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন ফি পূননির্ধারণ করা হয়েছে: প্রথম ৫ লক্ষ টাকা কাবিনে, ১৪০০ এবং পরবর্তী প্রতি লক্ষ টাকায় ১০০ টাকা।

  • এক লক্ষ টাকা দেনমহোরে রেজিস্ট্রেশন ফি: ১৪০০ টাকা
  • দুই লক্ষ টাকায় ১৪০০*২= ২৮০০ টাকা
  • তিন লক্ষ টাকায় ১৪০০*৩= ৪২০০ টাকা
  • চার লক্ষ টাকায় ১৪০০*৪= ৫৬০০ টাকা
  • পাঁচ লক্ষ টাকায় ১৪০০*৫= ৭০০০ টাকা
  • ৬ লক্ষ টাকায় ৭০০০+১০০=৭১০০
  • ৭ লক্ষ টাকায় ৭১০০+১০০=৭২০০
  • এভাবে পরবর্তী প্রতি লক্ষ টাকার জন্য ১০০ টাকা করে বাড়বে।

কোর্ট ম্যারেজ খরচ ২০২৫

কোর্ট ম্যারেজ এর খরচ
কোর্ট ম্যারেজ এর খরচ

নোটারি পাবলিক বা প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের ফি, স্ট্যাম্প এবং অন্যান্য খরচসহ আমরা সাধারণত ৩০০০ টাকা নিয়ে থাকি। তবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি অনুযায়ী এই খরচ কম বা বেশি হতে পারে।

কোর্ট ম্যারেজের পাশাপাশি বিবাহ রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। সুতরাং, ২০০৯ (সংশোধন ২০২২)-এর ২১ বিধি অনুযায়ী , বিবাহ রেজিস্ট্রেশন ফি প্রথম ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রতি লক্ষ টাকায় ১৪০০ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি লক্ষ টাকায় ১০০ টাকা হিসেবে খরচ নির্ধারণ করতে হবে।

মনে করেন আপনি কাবিন করবেন ৭ লক্ষ  টাকা, তাহলে আপনার ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন সহ কোর্ট ম্যারেজ খরচ হবে ৭২০০+৩০০০= ১০২০০ টাকা।
এই খরচ পুনরায় পরিবর্তিত না হওয়া পর্যন্ত, কোর্ট ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন ফি ২০২৫, ২০২৬, ২০২৭,২০২৮, ২০২৯ ………. এই হিসাবে চলতে থাকবে।

 

কোর্ট ম্যারেজ করতে কি কি লাগে?

১। দুই জন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ সাক্ষি। (তবে এক জন  ছেলে এক জন মেয়ে হলেও হবে)

২। দুই কপি ছবি। (ছেলে মেয়ে উভয়ের)

৩। এন আই ডি/ এস এস সি, এইচ এস সি সনদ/ জন্ম সনদ। (ছেলে মেয়ের উভয়ের)

# এন আই ডি না থাকলে এস এস সি, এইচ এস সি সনদ/ জন্ম সনদ দিয়ে করা যাবে। 

কোর্ট ম্যারেজ করতে কি কি লাগে

কোর্ট ম্যারেজ করতে বয়স কত লাগে?

বয়স অবশ্যই আঠারো (মেয়ে) ও একুশ (ছেলে) হতে হবে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বয়সের শিথিলতা রয়েছে।
অভিভাবক (বাবা অথবা মা) সাথে থাকলে, মেয়ের বয়স একটু কম হলেও করা যায়।

রেজিস্ট্রিসহ কোর্ট ম্যারেজ করতে কত সময় লাগে?

অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন কোর্ট ম্যরেজ করতে কত সময় লাগে? এক দিনে কি কোর্ট ম্যারেজ প্রক্রিয়া সম্পর্ণ করা সম্ভাব?
বিবাহ রেজিস্ট্রিঃ
বিবাহ কাজী দ্বারা রেজিস্ট্রি করতে কয়েক মিনিট সময় লাগে। কাজি সাহেবের ভলিউম বইয়ে ছেলে মেয়ের স্বাক্ষর হলেই বিবাহ রেজিস্ট্রি হয়ে যায়। এর পর কাজি সাহেব হিজাব কবুলের মাধ্যমে ইসলামি শরিয়া মোতাবেক বিবাহ সম্পূর্ণ করেন, যা কয়েক মিনিটের কাজ মাত্র।

কোর্ট ম্যারেজঃ
কোর্ট ম্যারেজ করতে একজন আইনজীবী, নোটারি পাবলিক বা প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট এবং নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প প্রয়োজন। দির্ঘ একটা প্রক্রিয়া, কিন্তু আপনি যদি কোর্ট-এ যান তাহলে সব কিছু একই জাগায় পেয়ে যাবেন, ফলে সময় বেচে যাবে।

বিবাহ রেজিস্ট্রিসহ কোর্ট ম্যারেজ সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া মাত্র এক ঘন্টায় করা সম্ভাব। আমাদের অফিসে একই টেবিলে বসে একই সময়ে কোর্ট ম্যারেজ এবং কাজী রেজিস্ট্রির ব্যবস্থা আছে। যাবতীয় কাজ সম্পূর্ণ করতে সর্বোচ্চ এক ঘন্টা সময় লাগে। বিস্তারিত জানতে 01515-615786

সতর্কতাঃ

কোর্ট-এর বাইরে কোথাও কাজ করলে,অনেক সময় উকিল এবং নোটারি পাবলিকের নকল সিল/স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়/ হতে পারে। ফলে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন রকম হয়রানির শিকার হতে হয়।

ছেলে মেয়েদের জন্য সর্কতাঃ ছেলে মেয়েরা অনেক সময়হ আবেগের বসে ভুল পার্টনার পছন্দ করে বিয়ের  সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, পরবর্তি সময়ে দেখা যায় তাদের বনিবনা হয় না, সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়। সুতারাং বিয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই আগে থেকে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ। প্রত্যেকটা পালিয়ে বিয়ে করার পেছনেই ২ টা সংসার, কিছু জীবন এবং কতগুলো স্বপ্নভঙ্গের থাকে, সেই দিকগুলা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ। 

হিন্দুরা কোর্ট ম্যারেজ করতে পারবে?

হিন্দু কোর্ট ম্যারেজ করা যায় , তবে এক্ষেত্রে বিবাহ রেজিস্ট্রি করা উচিত। এর পর অবশ্যই হিন্দু আইনের প্রথা মেনেই বিয়ে সম্পন্ন করতে হবে। তানা হলে বিবাহ সর্ব ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য হবে না।  হিন্দু কোর্ট ম্যারেজ কি ভাবে করবেন জানতে ক্লিক করুন হিন্দু কোর্ট ম্যারেজ।

সম্পুর্ণ প্রক্রিয়া কিভাবে করবেন ভিডিওতে দেখেন

ভিন্ন ধর্মের ছেলে মেয়েদের মধ্যে কোর্ট ম্যারেজ করা যায়?

আমাদের দেশের আইন অনুযায়ীই এক জন মুসলিম ভিন্ন ধর্মের কোনো ছেলে মেয়েকে বিবাহ করতে পারে।

অবশ্যই ভিন্ন ধর্মের ছেলে মেয়েকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে ধর্মান্তর হওয়ার জন্য একটা এবং বিবাহের জন্য একটা হলফনামা করতে হয়।
তবে মনে রাখবেন ধর্ম পরিবর্তন স্বইচ্ছায় হতে হবে। শুধু মাত্র বিবাহ করার জন্য ধর্ম পরিবর্তন করলে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ঝামেলায় পরতে হয়।

এছাড়া স্পেশাল ম্যারেজ এক্ট ১৮৭২ অনুসরন করে, ধর্ম পরিবর্তন না করেও যেকোন ধর্মের  ছেলে মেয়েরা একে অপরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে।

[ইসলামিক শরা-শরিয়ত মোতাবেক একজন মুসলিম কেবল আহলে কিতাব ( খ্রিস্টান, ইহুদি) কে বিবাহ করতে পারে।]

স্পেশাল ম্যারেজ সার্টিফিকেট

কোর্ট ম্যারেজের অসুবিধাঃ 

আপনার ভালবাসাকে বাস্তবে রুপ দিতে বাবা মায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে, নিজের সিদ্ধান্তে বিবাহ করছেন। কিন্তু আপনি কি একবার ভাবছেন যে বাবা-মা আপনাকে আদর যত্নে এত বড় করেছে তাদের ভালোবাসা কি এতই তুচ্ছ?

তাদের মতের কোন মুল্য নেই আপনার কাছে? মনে রাখবেন কোন বাবা মা তাদের সন্তানের খারাপ চান না। সুতরাং আমরা পালিয়ে বিবাহ করতে নিরউৎসাহিত করি। 

কোর্ট ম্যারেজের সুবিধা

কোন প্রাপ্ত বয়স্ক যুবক-যুবতি (ছেলে-মেয়ে) যেকোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে, এটা তাদের আইনি অধিকার। সুতরাং তারা চাইলে বিবাহের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
তাদের ভালবাসাকে বাস্তবে রুপ দিতে বাবা মায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে একে অপরকে বিবাহ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

কিন্তু কিছু সময় দেখা যায় বিয়ের পর মেয়ের বাবা বা ছেলের বাবা ক্ষেপে গিয়ে ছেলের/মেয়ের বিরুদ্ধে মামলা করে। এসময় কোর্ট ম্যারেজ আইনি ঝামেলার রক্ষা কবজ হিসাবে কাজ করে। (ছেলে বা মেয়ে পক্ষের মিথ্যা মামলা থেকে রক্ষা, সম্পর্ক টিকায় রাখা ইত্যাদি) তবে মনে রাখতে হবে বিবাহ রেজিষ্ট্রী করা বাদ্ধ্যতামুলক।

তাছারা আমাদের সমাজে court marriage বললেই এর উপর আর কেউ ঝামেলা করতে  চায় না। তাই মেয়ে  বা ছেলের বাবা এটা নিয়ে মামলা-ঝামলায় জরাতে চানা।

যোগাযোগঃ messenger

Phone:  01515-615786

Email: admin@marriagedivorcelawyerdhakabd.com বা focuse.unique60@gmail.com

2 thoughts on “কোর্ট ম্যারেজ করতে কি লাগে, বয়স, খরচ, কি ভাবে, কোথায় করবেন?”

  1. আমি চট্টগ্রাম থেকে বলছি আমি কিভাবে আপনাদের সহযোগিতা পেতে পারি? আপনাদের মাধ্যমে কি করা যাবে?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *