বিদেশি নাগরিক বিয়ের নিয়ম

বাংলাদেশে বিদেশি নাগরিক বিয়ের নিয়ম, আইন, সার্টিফিকেট, চ্যালেঞ্জ ও সমাধান

“তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগে পৃথিবীর সকল প্রান্তের মানুষ এক ছাদের নিচে বসবাস করছে। বর্তমানে বিভিন্ন দেশের ছেলে-মেয়ে তথা বিদেশিদের সাথে বাংলাদেশী ছেলে-মেয়েদের বিয়ে একটি সাধারণ ঘটনা। যদি আপনি একজন বিদেশি নাগরিক হিসেবে একজন বাংলাদেশীকে বিয়ে করতে চান বা একজন বাংলাদেশী হিসেবে একজন বিদেশি নাগরিককে বিয়ে করার পরিকল্পনা করেন, তাহলে বেশ কিছু আইনগত জটিলতার সম্মুখীন হতে পারেন। বিদেশি নাগরিক বিয়ের নিয়ম সম্পর্কে জেনে এই জটিল বিষয়গুলোকে সহজে মোকাবিলা করা সম্ভব। এই লেখাটিতে জটিল বিষয়গুলোকে সহজে তুলে ধরা হয়েছে, যা আপনার বিবাহের প্রক্রিয়াকে সহজ ও নির্ভুল ভাবে সম্পন্ন করতে সাহায্য করবে। (এই লেখাটা ইংরেজিতে পড়তে পারেন)

বিদেশি নাগরিক বিবাহ আইন

বিদেশি নাগরিকদের সাথে বিবাহের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো আইন বা বাধা-নিষেধ নেই। তাই বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা যেকোনো দেশের নাগরিকের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে। তবে, বাংলাদেশের সরকারি চাকরিজীবীরা বিদেশি নাগরিককে বিয়ে করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের থেকে অনুমতি নিতে হবে।

কোনো গণকর্মচারী কোনো বিদেশি নাগরিককে বিবাহ করিবার বা বিবাহ করিবার প্রতিশ্রুতি প্রদানের অনুমতি চাহিয়া আবেদন করিলে রাষ্ট্রপতি উক্ত আবেদন মঞ্জুর করিতে পারিবেন।
(২০১৫ সনের ২২ নং আইন)

ম্যারেজ রেজিস্ট্রার বাংলাদেশ

বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করে, সার্টিফিকেট প্রদান করেন। বাংলাদেশে ৪ ধরনের বিবাহ রেজিস্ট্রার হয়।

. মুসলিম বিবাহ রেজিস্ট্রার (১৯৬১)
. হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রার (২০১২)
. খ্রিষ্টান ম্যারেজ রেজিস্ট্রার (১৮৭২)
. স্পেশাল ম্যারেজ রেজিস্ট্রার (১৮৭২)

 দেশ ও ধর্ম বেঁধে বিদেশি নাগরিক বিয়ের নিয়ম বিভিন্ন হয়ে থাকে। যারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে তারা যদি দুই জনেই মুসলিম, হিন্দু বা খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারী হয় তাহলে তারা যথাক্রমে ১, ২, ৩ নং রেজিস্ট্রার দ্বারা রেজিস্ট্রি করে সার্টিফিকেট নিতে পারবে।

একজন মুসলিম এবং অন্য ধর্মের কেউ বিয়ে করতে চাইলে, ধর্ম পরিবর্তন করে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলিম বিবাহ আইন ১৯৬১ (১নং) অনুযায়ী রেজিস্ট্রি করে সার্টিফিকেট নিতে পারবেন। অথবা, ধর্ম পরিবর্তন না করে স্পেশাল ম্যারেজ রেজিস্ট্রার ১৮৭২ (৪নং) এর অধীনে রেজিস্ট্রি করে সার্টিফিকেট নিতে পারবেন। স্পেশাল ম্যারেজ রেজিস্ট্রি করার ১৪ দিন আগে নোটিশ দিতে হয়।

বিদেশি বিবাহ নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

বাংলাদেশে বিবাহ নিবন্ধনের জন্য উভয় পক্ষের নিম্নলিখিত কাগজপত্র প্রদান করতে হবে:

পাসপোর্ট/এনআইডির ফটোকপি: উভয় পক্ষের পাসপোর্ট/এনআইডির ফটোকপি জমা দিতে হবে।
ছবি: পাসপোর্ট সাইজের চার কপি করে ছবি।
ইমিগ্রেশন সিলের ফটোকপি: বাংলাদেশে প্রবেশের সময় পাসপোর্টে প্রদত্ত ইমিগ্রেশন সিলের একটি ফটোকপি বিদেশিদের জন্য প্রযোজ্য।
ভিসার ফটোকপি: বিদেশির ভিসার একটি ফটোকপি।
অতিরিক্ত কাগজপত্র: যদি উভয় পক্ষের কেউ বা উভয় পক্ষই তালাকপ্রাপ্ত হয়, তাহলে তালাকের সনদ লাগবে। (প্রতিটি কাগজপত্রের দুটি করে কপি জমা দেওয়া লাগবে)
এছাড়া বিবাহ নিবন্ধনের জন্য তিনজন সাক্ষী লাগবে।

বিবাহের জন্য যোগ্যতা শর্ত

বয়স: ছেলের বয়স ২১ এবং মেয়ের বয়স ১৮ বা তার বেশি হতে হবে।
বৈবাহিক অবস্থা প্রমাণ: উভয় ব্যক্তি একক, তালাকপ্রাপ্ত বা বিধবা হিসেবে প্রমাণ করার কাগজপত্র।
পরিচয়: বৈধ পাসপোর্টের সঙ্গে ইমিগ্রেশন সিল এবং ভিসা কপি, যা বাংলাদেশে বৈধ ভাবে  প্রবেশর প্রমাণ করে।
নিষেধাজ্ঞা না থাকা: উভয় দেশের নাগরিকদের মধ্যে বিবাহের উপর কোন সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকবে না।  

বাংলাদেশে বিদেশি বিবাহ নিবন্ধন প্রক্রিয়া

দুজনের ধর্ম এবং দেশ অনুযায়ী সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দ্বারা বিবাহ স্থানীয় রেজিস্ট্রারের অফিসে নিবন্ধন হতে হবে। এখানে ধাপে ধাপে নির্দেশিকা দেওয়া হল:

আবেদন: নির্দিষ্ট রেজিস্ট্রারের নিকট বিবাহ নিবন্ধনের জন্য আবেদন জমা দিতে হবে। অনলাইনে আবেদন করা যায় না। অনলাইনে দুজনের নাম ঠিকানা সংবলিত একটি ফরম্যাট নেওয়া যায়, কিন্তু উপস্থিত হয়ে স্বাক্ষরের মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। বিঃ দ্রুঃ অনলাইনে বিবাহের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া যায়।
কাগজপত্র জমা: প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্রের ফটোকপি, পাসপোর্ট, ভিসা এবং বৈবাহিক অবস্থার প্রমাণপত্র প্রদান করতে হবে।
সাক্ষী: ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশনের সময় তিনজন সাক্ষী উপস্থিত থাকতে হবে।
যাচাই: রেজিস্ট্রার উভয় পক্ষের সকল কাগজপত্র যাচাই করবেন।
নিবন্ধন ফি: নিবন্ধন প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ফি প্রদান করতে হবে। 

ম্যারেজ সার্টিফিকেট

 উপরোক্ত প্রক্রিয়া যাচাই-বাছাই করে ম্যারেজ রেজিস্ট্রার বিবাহ নিবন্ধন করবেন। পাসপোর্ট এবং অন্যান্য কাগজপত্র অনুযায়ী সার্টিফিকেট প্রদান করবেন।

ম্যারেজ সার্টিফিকেট নোটারি পাবলিক

ম্যারেজ রেজিস্ট্রার থেকে সার্টিফিকেট নেবার পর উক্ত সার্টিফিকেট নোটারি পাবলিকের কার্যালয় থেকে সত্যায়িত করতে হবে। সতর্কতাঃ নোটারি পাবলিকে কোনো সমস্যা থাকলে মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন করা যাবে না, পুনরায় রেজিস্ট্রার থেকে সার্টিফিকেট নিতে হবে।

নোটারি পাবলিক করার পর দেশের মধ্যে যেকোনো কাজের জন্য সার্টিফিকেট প্রস্তুত। কিন্তু যেহেতু এটি বিদেশে ব্যবহার করতে হবে সেহেতু আইন মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করতে হবে।

আইন মন্ত্রণালয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন

আইন মন্ত্রণালয় সার্টিফিকেট সত্যায়ন করে দেওয়া মানে এই সার্টিফিকেটে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কোনো সমস্যা নেই।
ল মিনিস্ট্রি সত্যায়নের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে সন্তুষ্ট হলে সত্যায়ন করবে। আইন মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন সঠিক থাকলে উক্ত সার্টিফিকেট এম্বাসি গ্রহণপূর্বক তাদের দেশের আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ তথা ভিসা প্রদান করবে।

সমস্যা এবং সমাধান  

সমস্যা ১. কাজ শুরু করার আগে পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে হবে, যা আপনার কাজকে সহজ এবং নির্ভুলভাবে সম্পন্ন করতে সাহায্য করবে।
সমাধান ১. আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাকে বিদেশি নাগরিক বিয়ের নিয়ম সঠিকভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।

সমস্যা ২. বিদেশি বিবাহ নিয়ে কাজ করেন এমন একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী খুঁজে পাওয়া, যিনি আপনার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সহজ এবং নির্ভুলভাবে করতে সাহায্য করবেন।

আপনার ধর্ম এবং দেশ অনুযায়ী সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে। সতর্কতাঃ ভারতীয় এম্বাসি শুধুমাত্র স্পেশাল ম্যারেজ ১৮৭২ সার্টিফিকেট ছাড়া  অন্য কোন রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট গ্রহণ করে না।
সার্টিফিকেট ইস্যু হওয়ার পর নোটারি পাবলিক করতে সাহায্য করবে। আইন মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সার্টিফিকেট সত্যায়িত করার পর তা যাচাই-বাছাই করে এম্বাসির জন্য প্রস্তুত করে দেবে।

বিঃ দ্রুঃ ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন এবং মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন সঠিকভাবে না হলে এম্বাসি সার্টিফিকেট গ্রহণ করে না, সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া পুনরায় করতে হয়।

সমাধান ২. অভিজ্ঞ আইনজীবী খুঁজে পেতে আপনি তাদের ওয়েবসাইট এবং গুগল ম্যাপের রিভিউ থেকে বিগত কাজের সফলতা ও প্রমাণ দেখতে পারেন।

সমস্যা ৩. হোটেল ভাড়া: বাংলাদেশে কাপল হিসেবে হোটেল ভাড়া নিতে হলে বিবাহের প্রমাণ দিতে হয়।
সমাধান ৩. যদি আপনাদের হোটেলে থাকার প্রয়োজন হয়, তাহলে আইনজীবীর সাথে কথা বলে একটি বিবাহের হলফনামা করে নেবেন।

আমরা কি ভাবে  আপনাকে সাহায্য করতে পারবো?

দশ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আমাদের টিম বিভিন্ন দেশের ও ধর্মের ম্যারেজ ডিভোর্স সেবা দিয়ে উজ্জ্বলভাবে সফল। আমাদের গুগোল ম্যাপের ইতিবাচক রিভিউ এবং আমাদের ওয়েবসাইট  কাজের ছবিগুলো আমাদের পেশাদারিত্বের প্রমাণ। আবেদন করা থেকে শুরু করে এম্বাসিতে সাবমিট করার আগ পর্যন্ত সব কাজ দ্রুত সময়ে আমরা করে থাকি। বিস্তারিত জানতে কল/হোয়াটসঅ্যাপঃ ৮৮০১৫১৫৬১৫৭৮৬।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *