একটা মুসলিম ছেলে একটা খ্রিস্টান মেয়েকে পছন্দ করে, ভালোবাসে। কিন্তু দুজনের ধর্ম ভিন্ন হবার কারণে তারা তাদের ভালোবাসাকে বাস্তবায়ন করতে পারছে না, বিয়ে করতে পারছে না। এদিকে তারা কেউ ধর্ম পরিবর্তন করতে চায় না, নিজ নিজ ধর্মে থেকে তাদের ভালবাসা বাঁচিয়ে রাখতে চায়। কিন্তু তাদের মনে প্রশ্ন বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কি তারা নিজ নিজ ধর্মে থেকে বিয়ে করতে পারবে? মুসলিম ও খ্রিষ্টানের মাঝে বিয়ে কী জায়েজ? ইসলাম ধর্ম কি খ্রিষ্টান মেয়ে মুসলিম ছেলে বিয়ে সমর্থন করে? ইত্যাদি।
আজকে এই লেখার মাধ্যমে আমরা তুলে ধরব, মুসলিম ছেলে খ্রিষ্টান মেয়ে কিভাবে বিয়ে করতে পারবে? কি কি লাগবে? কিভাবে করতে হবে? কোথায় করতে হবে? ভিন্ন ধর্মে বিয়ে বিষয়ে বাংলাদেশের আইন কি বলে? ধর্ম মতের বাইরে বিয়ের ইসলামিক নির্দেশনা, বিবাহবিচ্ছেদ ও উত্তরাধিকার।
খ্রিষ্টান মেয়ে মুসলিম ছেলে কিভাবে বিয়ে করতে পারে?
বিশেষ বিবাহ আইনের অধীনে যে কোন ধর্ম অবলম্বী ছেলে, মেয়ে যে কোন ধর্মের ছেলে, মেয়েকে বিয়ে করতে পারে এবং বিবাহের পর যে যার ধর্ম পালন করতে পারবে। সুতরাং বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী (স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট ১৮৭২) খ্রিস্টান মুসলিম বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে।
মুসলিম ও খ্রিষ্টানের মাঝে বিয়ে কী জায়েজ ?
উত্তর হ্যা জায়েজ।
ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী একজন মুসলিম একজন মুশরেক/ মুশরেকা বিয়ে করতে পারে না।
সুরা বাকারার ২২১ নং আয়াতে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন “তোমরা মুশরিক নারীদেরকে বিয়ে করোনা, যতক্ষণ না তারা ঈমান গ্রহণ করে”
অন্য দিকে সুরা আল মায়িদার ৫ নং আয়াতে আল্লাহতালা বলেছেন “তোমাদের পূর্বে আহলে কিতাবধারী সৎচরিত্রিরের অধিকারী মেয়েদের তোমরা বিয়ে করতে পারবে”
যেহেতু ইহুদি এবং খ্রিস্টান কিতাবধারী সুতারাং ইহুদি এবং খ্রিস্টান নারিদেরকে বিয়ে করা যাবে। তবে উক্ত আয়াতে আরও উল্লেখ আছে যে ইহুদি বা খ্রিস্টান পুরুষেরা মুসলিম নারীদের বিয়ে করতে পারবে না।
সুরা বাকারা ২২১ নং এবং সুরা মাইদা ০৫ নং আয়াত থেকে বুঝা যায় যে একজন মুসলিম একজন খ্রিস্টান মেয়েকে বিয়ে করতে পারে কিন্তু ইহুদি, খ্রিস্টান বা যে কোন ধর্মাবলম্বী ছেলের সাথে মুসলিম মেয়েকে বিয়ে দেওয়া যাবে না।
মুসলিম ও খ্রিষ্টানের মাঝে বিয়ে সম্পর্কে ডাঃ জাকির নায়েকের লেকচার
স্পেশাল ম্যারেজ কোথায় করতে হবে?
মুসলিম ছেলে এবং খ্রিস্টান মেয়ে বিয়ে করার জন্য আইন-মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত একজন স্পেশাল ম্যারেজ রেজিস্ট্রার এর নিকট বিয়ে রেজিস্ট্রি করতে হয়। এছাড়া একজন নোটারি পাবলিক এর মাধ্যমে একটা হলফনামা করতে হয়, যা একজন অ্যাডভোকেট দ্বারা সত্যায়িত করতে হয়।
সুতারাং যেখানে একজন স্পেশাল ম্যারেজ রেজিস্ট্রার, একজন নোটারি পাবলিক এবং একজন অ্যাডভোকেট আছে সেখানে যেতে হবে। কোর্ট এড়িয়াতে সাধারণত অ্যাডভোকেট এবং নোটারি পাবলিক পাওয়া যায় (সকল কোর্ট এড়িয়াতে স্পেশাল ম্যারেজ রেজিষ্টার থাকে না)।
আমরা ইসলামি শরিয়া ও বাংলাদেশী আইন অনুযায়ী মুসলিম ছেলে এবং খ্রিস্টান মেয়ের মধ্যে বিয়ে করিয়ে দেই। আমাদের নিজেস্ব বিশেষ বিবাহ রেজিস্ট্রার, নোটারি পাবলিক এবং অ্যাডভোকেট আছে, যোগাযোগঃ ০১৫১৫-৬১৫৭৮৬।
খ্রিষ্টান মেয়ে মুসলিম ছেলে কিভাবে বিয়ে করতে পারবে?
এই বিশেষ বিবাহ করতে ছেলে মেয়ে উভয়কে একটি হলফনামার মাধ্যমে ঘোষণা করতে হবে যে তারা বিবাহের ক্ষেত্রে কোন ধর্ম বিশ্বাস করে না এবং তারা স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট ১৮৭২ এর অধীনে বিবাহ করতে চায় । (কিন্তু তার মানে এই নয় যে তারা ধর্মকে অস্বীকার করছে বরং বিয়ের পর তারা নিজ নিজ ধর্ম চর্চা করতে পারবে) এই হলফনামা নিয়ে একজন বিশেষ বিবাহ রেজিস্ট্রার এর নিকট গিয়ে বিবাহ রেজিস্ট্রি করবে।
হলফনামার নমুনা কপিঃ
হলফনামার নমুনা কপি প্রথম পেজ
হলফনামার নমুনা কপি ২য় পেজ
হলফনামার নমুনা কপি শেষ পেজ
উক্ত হলফনামা দেখে বিশেষ বিবাহ নিবন্ধক বিবাহ রেজিস্ট্রি করে ম্যারেজ সার্টিফিকেট প্রদান করবে।
সার্টিফিকেটের ছবি দেওয়া হলঃ
খ্রিষ্টান মেয়ে মুসলিম ছেলে বিয়ে সার্টিফিকেট
খ্রিষ্টান মেয়ে মুসলিম ছেলে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন
নোটারিয়াল সার্টিফিকেট
মুসলিম ছেলে খ্রিষ্টান মেয়ে বিয়ে করতে কি কি লাগে?
১। এন আই ডি কার্ড/ জন্মনিবন্ধন/ পাসপোর্ট যে কোন একটার ফটোকপি ( ছেলে মেয়ে উভয়ের)
২। তিন জন সাক্ষী।
৩। দুই কপি ছবি ( ছেলে মেয়ে উভয়ের)
খ্রিষ্টান মেয়ে মুসলিম ছেলে বিয়ে শর্ত
১। ছেলে বয়স ২১ এবং মেয়ের বয়স ১৮ বা তার বেশি হতে হবে।
২। যে কোন এক পক্ষ বিবাহ রেজিস্ট্রারের নিকট বিবাহের জন্য লিখিত নোটিশ পাঠাবে এবং নোটিশ পাঠাবার ১৪ দিন পর বিয়ে সম্পাদন করবে (নোটিশ বিষয় শিথিল যোগ্য)।
৩। ছেলে মেয়ে কেউ ডিভোর্সি হলে, রেজিস্ট্রার এর নিকট ডিভোর্সের সার্টিফিকেট প্রদান করবে।
উত্তরাধিকার এবং বিবাহ বিচ্ছেদ
বিবাহ বিচ্ছেদঃ বিশেষ বিবাহ আইন ১৮৭২ এর অধীনে করা বিবাহ বিচ্ছেদ একটি জটিল বিষয়। ১৮৬৯ সালের ডিভোর্স আইন অনুযায়ী আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে বিশেষ বিবাহ বিচ্ছেদ করা যায়।
উত্তরাধিকারঃ ১৯২৫ অনুযায়ী সন্তানদের মাঝে সম্পদ বণ্টণ হয়।